Author: SADIA MARIUM
“নিশ্চিন্তপুর!!”
২৪ নভেম্বর, ২০১২। আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরের বাতাস ভারী, লাশের গন্ধে। টেলিভিশনের সামনে বসেছিলাম, একের পর এক চ্যানেল-মানুষগুলোর কান্না, আর্তনাদ, সংবাদপত্রের ভয়াবহ ছবি; মাথার ভেতর ঘুরপাক করছিলো দিনভর। নিজের অজান্তেই কেঁদেছি, গালিগালাজ করেছি “তাজরিন গার্মেন্টস” এর মালিক, প্রশাসন, সরকার, বিজিএমইএ এর সভাপতি কে।মনটা শান্ত হচ্ছিলোনা কোনোভাবেই। জ্বালিয়ে দিতে ইচ্ছে করছিলো সবকিছু। রাস্তায় রাস্তায় চিৎকার করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো। ভাবছিলাম, শব্দ কিংবা ছবিতে অনুভূতি বা মুহূর্ত বন্দি করবার চেয়ে, যদি আমার হাতে মশাল থাকতো, তবে আগুনে ঝলসে দিতাম নিষ্ঠুর, স্বার্থান্বেষী পশুগুলোর জীবন্ত শরীর। এমন দুঃসাহসিক ইচ্ছেগুলো-ই একসময় “অযৌক্তিক, অবান্তর” হয়ে ওঠে সাহসের অভাবে। আমার মধ্যবিত্ত মন দুঃসাহসী হতে ভয় পায়-শান্তিচ্যুতি হবে জেনে।
হ্যাঁ-সাহস নেই আমার; আমি শিখেছি কি করে চুপ থাকতে হয়। কি করে নিজের ঘর “শান্তিময় ও স্নিন্ধ” করে রাখা যায়, যখন পৃথিবী পুড়ে ছারখার। রাগে ফুঁসে ওঠা আমি-ই প্রতিদিনকার নানান অন্যায় দেখেও না দেখবার ভান করি, সংবরণ করি, শান্ত করি নিজেকে; মিথ্যে নির্ঝঞ্ঝাট জীবনের লোভে। রাগ, ক্রোধ আমার আটপৌরে জীবনের হেঁসেলে ঢুঁকে ধোঁয়া হয়ে মিশে যায় হাওয়ায়।
আমি জানি, নিশ্চিন্তপুরের হত্যাযজ্ঞের জন্য দায়ী-“আমি”।আমি-ই তালাবদ্ধ করেছি শত শত প্রান, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছি রক্তমাংসের অনুভূতিপ্রবণ মানুষগুলো কি করে পরিণত হচ্ছে সংখ্যায়।১১১ কিংবা ১১১১-কে তারা, চিনি কি তাদের? মরিয়ম, জুলেখা, কাদের, শারমিন, মারুফ…কোনো অর্থ কি বহন করে নামগুলো? আমি আনন্দিত হই বেঁচে আছি বলে, আমার বাবা-মা, ভাই-বোন, স্বামী, সন্তান, বন্ধু-বান্ধব ভালো আছে ভেবে। সব কিছুকে “দুঃস্বপ্ন” তকমা লাগিয়ে ফিরে যাই দৈনন্দিনের পরিচিত গন্ডিতে, ভালোবাসার মানুষ কে বুকে জড়িয়ে নিশ্চিন্ত ঘুম দেই।
চলুন আমরা আরো পাষন্ড হই, বোধহীন নির্মম হই, দুর্ঘটনা ভেবে-ভুলে যাই যা ঘটেছে।
নিশ্চিন্তপুর জ্বলুক, জ্বলুক তামাম দুনিয়া, আমরা স্বার্থপরেরা ভালো থাকি।
“পৃথিবীতে শান্তি বজায় থাকুক”।
- © quamrul abedin, 2012
- © quamrul abedin, 2012
- © quamrul abedin, 2012
- © shahrear kabir heemel
- © shahrear kabir heemel
- © quamrul abedin, 2012
- © quamrul abedin, 2012
- © quamrul abedin, 2012
- © quamrul abedin, 2012
- © shahrear kabir heemel